Quantcast
Channel: You searched for চুম্বন | Amar Bangla Post
Viewing all articles
Browse latest Browse all 93

ওমরায় করণীয় কাজ সমূহ

$
0
0

ওমরায় করণীয় কাজ সমূহ

সংকলনঃ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমিন (রাহঃ)

অনুবাদঃ কিং আব্দুল্লাহ অনুবাদ ও আরবিকরণ ইনস্টিটিউট


পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। সমস্ত পশংসা আল্লাহর জন্য, সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার পরিবার পরিজন এবং তার সাহাবাগণের ও পরবর্তী নেককারগণের উপর।

ওমরা হজ্জওমরায় করণীয় কাজ হচ্ছেঃ

ইহরাম, তাওয়াফ, সা’য়ী এবং মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করা।

ইহরামঃ ইহরাম হচ্ছে নিয়ত করে নির্দিষ্ট পোশাক পরিধা করে হজ্জের কাজ শুরু করা। যিনি ইহরাম বাঁধবেন তার জন্য সুন্নাত পদ্ধতি হচ্ছে, পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করবেন, যেমনটি গোসল করা হয় অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য। এবং তার কাছে সবচেয়ে চাল যে সুগন্ধী আছে – সুগন্ধী কাঠ বা তৈলাক্ত-তা থেকে তার মাথায় ও দাড়ীতে ব্যবহার করবেন। ইহরাম বাঁধার পরও এই সুগন্ধি ঘ্রাণ বাকী থাকলে কোন ক্ষতি নেই। কেননা বুখারী ও মুসলিম-এ উল্লেখিত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করতেন তখন তিনি তার কাছে সব চেয়ে ভালো সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। পরে মিশক সুগন্ধির দাগ তার মাথায় ও দাড়িতে লেগে থাকতে দেখতাম।

পুরুষ, মহিলা এমনকি হায়েয নেফাসরত মহিলাদের বেলায়ও ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা সুন্নাত। কেননা, বিদায়ী হজ্জের সফরে যুল হুলাইফা নামক স্থানে আসমা বিনতে উমাইশ যখন মুহাম্মাদ বিন আবু বকরকে প্রসব করেন, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেনঃ তুমি গোসল কর এবং কাপড় (রক্ত স্রাবের স্থানে পট্টি লাগিয়ে) পরিধান করে ইহরাম কর। (মুসলিম)

অতঃপর গোসল করে সুগন্ধী ব্যবহার করার পর ইহরামের কাপড় পরিধান করবেন, ইহরামের কাপড় হচ্ছে পুরুষের জন্যে পরনে ও গাঁয়ের দু’টি চাদর, আর মহিলা যে কোন পোশাক পরিধান করে ইহরাম বাঁধবেন। তবে শর্ত হচ্ছে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী পোশাক হতে পারবে না, হাত মোজা ও নিকাব পরতে পারবেন না। আর গায়রে-মাহরাম পুরুষদের সামনে মুখ ঢেকে রাখবেন।

অতঃপর হায়েয ও নেফাসরত মহিলাগণ ব্যতীত (সাধারণ হাজীগণ) যদি ঐ মুহূর্তে ফরয নামাযের ওয়াক্ত হয়ে থাকে তাহলে ফরয নামায আদায় করবেন, অন্যথায় ওযুর পর সুন্নাত হিসেবে দু’রাকআত আদায় করবেন।

নামায শেষে “লাব্বাইকা ওমরাতান, লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’ মাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারিকা লাক”

(হে আল্লাহ ওমরার জন্যে আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির-আমি হাজির, আপনার কোন শরীক নেই, আমি হাজির, নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা ও নিয়ামত আপনারই, আর সকল বাদশাহী আপনার, আপনার কোন শরীক নেই) এ দোয়া পাঠ করে পুরোপুরী ইহরামে প্রবেশ করবেন।

এটাই হল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তালবিয়া।

আবার কখনো কখনো তিনি বাড়িয়ে বলেছেনঃ “লাব্বাইকা ইলাহুল হাক্ব লাব্বাইক” (আমি হাজির..হে সত্যের ইলাহ আমি হাজির) ।

পুরুষের জন্য সুন্নাত হচ্ছে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করা। কারণ, সায়েব বিন খাল্লাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ জিবরাইল আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন আমার সাহাবাগণকে উচ্চস্বরে তালবিয়া এবং লা হাওলা ওলা কু’ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ পড়ার আদেশ দেই। (ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ, নাসায়ী তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ) কারণ, উচ্ছস্বরে পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিদর্শন প্রকাশ পায় ও আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা হয়।

তবে, মহিলা হলে তালবিয়া বা অন্য যে কোন দোয়া উচ্চস্বরে পড়বেন না। কেননা তাঁদের পর্দা বজায় রাখা আবশ্যক।

আর তালবিয়া পাঠকারীর “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক” বলার অর্থ হচ্ছেঃ হে রব, আপনার আহ্বানে সাড়া দিচ্ছি, আপনার আনুগত্য প্রতিষ্ঠায় আমি হাজির।

কেননা মহান আল্লাহ তার দু’জন পরম বন্ধু হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে তার বান্দাগণকে হজ্জের দিকে আহ্বান করেছেন এবং নির্দেশ দিয়ে বলেছেনঃ

আরবী……

অর্থঃ এবং মানুষের মধ্যে হজ্জের জন্যে ঘোষণা প্রচার কর। তাঁরা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দুর-দুরান্ত থেকে, যাতে তাঁরা তাঁদের কল্যানের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে।

আর কারো যদি হজ্জের পথে বাঁধা প্রাপ্ত হওয়ার ভয় থাকে বা কেউ যদি অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে হজ্জ পূর্ণ করতে শঙ্কিত থাকেন, এমতাবস্থায় সুন্নাত হলো, ইহরামের নিয়তের সময় শর্ত করবেন এবং বলবেনঃ আমি যদি কোন স্থানে বাধাপ্রাপ্ত হই তাহলে আমি সেস্থানেই স্থগিত করব। অর্থাৎ অসুস্থতা, বিলম্ব বা এ দু’টি ব্যতীত অন্য কোন বাঁধা আমাকে বাধাপ্রাপ্ত করে তাহলে আমি আমার ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবো।

কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম দোবআতা বিনতে যুবাইর এর কাছে প্রবেশ করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ মনে হচ্ছে তুমি হজ্জ করতে চাচ্ছ? তিনি জবাবে বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমার খুব ব্যাথা করছে। অতঃপর তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি (নিয়তে) শর্ত করে হজ্জ করো, আর বলোঃ হে আল্লাহ! যেখানেই আমাকে বাধাগ্রস্থ করবেন আমি সেখানেই ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবো। আরো বললেনঃ তুমি তোমার প্রতিপালককে যা বলবে নিশ্চুয়ই তুমি তাই পাবে। (বুখারী ও মুসলিম)

সম্মুখীন হওয়ার ভয়ে না থাকেন, তার জন্যে এমন শর্ত করা সমুচিত হবে না, কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম যখন ইহরাম বেঁধেছেন কোন শর্ত করেননি, আর বলেছেনঃ তোমরা আমার নিকট থেকে তোমাদের হজ্জের বিধানসমূহ গ্রহণ করো। (মুসলিম)

আর তিনি প্রত্যেককে ব্যাপকভাবে ইহরামের নিয়তে শর্ত করার জন্যে নির্দেশ দেননি। এটাতো বিশেষ করে দোবআতা বিনতে যুবাইরকে কেবল অসুস্থতা থাকা এবং হজ্জ পরিপূর্ণ করতে না পারার আশংকার কারণে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ইহরামরত ব্যক্তির জন্যে উচিত হবে অধিক পরিমাণে তালবিয়া পাঠ করা, কেননা তা (লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা) হচ্ছে হজ্জের বিধানের মৌখিক স্বীকারোক্তি। বিশেষ করে হজ্জ পালন কালে বিভিন্ন সময় ও অবস্তার পরিবর্তের সময়, যেমনঃ উঁচু স্থানে উঠা অথবা নিচু স্থানে নামা, অথবা রাত দিন অনবরত আমল করা অথবা হারাম বা নিষিদ্ধ কাজকে গুরুত্ব দেয়া ও ইহরাম অবস্থায় কাটানো ইত্যাদি।

ওমরার ইহরাম বাঁধার শুরু থেকে তাওয়াফ পর্যন্ত এবং হজ্জে ইহরাম বাঁধার শুরু থেকে ঈদের দিন জামারা আকাবায় কংকর নিক্ষেপ পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ চলতে থাকবে।

হাজী সাহেব যখন মক্কার নিকটবর্তী হবেন  তখন সুন্নাত হচ্ছে, যদি সম্ভব হয় তাহলে সেখানে প্রবেশ করার জন্যে গোসল করে নেয়া। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম সেখানে প্রবেশের সময় গোসল করেছেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আ’নহুমা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কায় প্রবেশ করতেন তখন মক্কার বাতহা এলাকার উঁচু পাহাড়ের (ছানিয়ায়ে উলিয়া) দিক দিয়ে প্রবেশ করতেন, আর যখন চলে যেতেন তখন মক্কার নিচু পাহাড়ের (ছানিয়ায়ে ছুফলা) দিক দিয়ে বের হতেন। (বুখারী ও মুসলিম)

তাই যদি হাজী সাহেবের জন্যে সহজ হয় তাহলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম যেদিক দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেছেন আর সেদিক দিয়ে বের হয়েছেন সেদিক দিয়ে প্রবেশ করা এবং বের হওয়া অধিক উত্তম।

যখন আল মসজিদুল হারামে পৌঁছবেন, প্রবেশ কালে ডান পা আগে দিবেন এবং বলবেনঃ বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ’লা রাসূলিল্লাহ, আল্লাহুম্মাগফির লী যুনূবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা রাহমাতিকা, আ’উযুবিল্লাহিল আ’যীম ওয়া বিওয়াজহিহিল কারিম ওয়া বিছুলতানিহিল ক্বাদীমি মিনাশ্বাইত্বানির রাজীম। অর্থঃ আল্লাহর নামে শুরু করছি, রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের উপর, হে আল্লাহ আমার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা সমূহকে খুলে দিন, আমি মহান আল্লাহর পরাক্রমশালী ক্ষমতা ও সন্তুষ্টির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

আল্লাহকে তা’যীমের মাধ্যমে বিনয় ও বিনম্রতা সহকারে, বাইতুল্লায় পৌঁছার ক্ষেত্রে তার প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের স্মরণ রেখে বাইতুল্লায় প্রবেশ করবেন।

তাওয়াফঃ অতঃপর হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখোমুখি হয়ে কা’বা শরীফের কাছে অগ্রসর হয়ে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ শুরু করবেন। এ ক্ষেত্রে উচ্চারণ করে “নাওয়াইতুত্বাওয়াফ” (আমি তাওয়াফ করার নিয়ত করছি) এমনটি বলবেন না। কারণ, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম থেকে এই বিষয়ে কোন কিছু বর্ণিত  হয়নি, নিয়তের স্থান হচ্ছে অন্তর।

যদি সম্ভব হয় তাহলে ডান হাত দিয়ে ঘাজরে আসওয়াদ স্পর্শ এবং চুম্বন করবেন। বস্তুত, আল্লাহর গপ্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং রাসূলুল্লাহ কারীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ হিসেবে এটা করবেন। এ বিশ্বাসের জন্যে নয় যে, পাথর কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারে, বরং এটা (স্পর্শ এবং চুম্বন) শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে।

আমিরুল মুমিনিন উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করতেন আর বলতেনঃ আমি অবশ্যই জানি যে, নিশ্চয়ই তুমি একটি পাথর মাত্র, তুমি কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারো না, আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তোমাকের চুমো দিতে না দেখতাম, আমি তোমাকে চুমো দিতাম না। (বুখারী, মুসলিম, মুয়াত্তা ইমাম মালেক, তিরমিজী, আবু দাউদ ও নাসায়ী)

আর যদি চুমো দেয়া সম্ভব না হয়,  তাহলে হাত দিয়ে স্পর্শ করে নিজ হাতে চুমো দিবেন। কেননা, বুখারী ও মুসলিম-এ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে যে, তিনি (রাসূল) হাত দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করেছেন, অতঃপর স্বীয় হাত চুমো দিয়েছেন। তিনি (ইবনে ওমর) বললেনঃ আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঐ রকম করতে দেখার পর থেকে আমি এ আমলটি আর ছাড়িনি।

আর যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তাহলে ভিড় করবেন না। কেননা ভিড়ের মাধ্যমে নিজের এবং অন্যদের কষ্ট হয়। এতে হয়তো এমন কোন ক্ষতি হবে যার ফলে তার একাগ্রতা নষ্ট হবে এবং তাওয়াফের মাধ্যমে নির্দেশিত আল্লাহর ইবাদন অর্জিত হবে না। আর হয়তো এর (ভিড়ের) মাধ্যমে বাজে কথাম ঝগড়া বা হানাহানি হতে পারে।

সুতরাং দূর থেকে হাত দিয়ে ইশারা দিলেই যথেষ্ট হবে। বুখারী শরীফে ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহ  আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে যে, নবী কারীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটে চড়ে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন, আর রুকনে ইয়ামানী বরাবর আসার পর ঐ দিকে ইশারা করেছেন। অন্য এক  বর্ণনায় আছে, তার সাথে থাকা কোন কিছু দিয়ে ঐ দিকে ইশারা করেছেন এবং তাকবীর বলেছেন।

অতঃপর তাওয়াফকারী বাইতুল্লাহকে বাম দিকে রেখে ডানদিক দিয়ে তাওয়াফ শুরু করবেন। যখন রুকনে ইয়ামানীতে পৌঁছবেন, সম্ভব হলে হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন, কিন্তু চুমো দিবেন না, যদি হাত দিয়ে স্পর্শ সম্ভবপর না হয় তাহলে ভিড় করবেন না। হাজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানী ছাড়া বাইতুল্লাহর কোন কিছু স্পর্শ করবেন না। কেননা এ দু’টি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নির্মিত ভিত্তির উপর রয়েছে এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দু’টি স্পর্শ করেছেন।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেছেন, ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একদা মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বাইতুল্লাহর সবগুলো রুকন (কোনা)  স্পর্শ করছিলেন। ইহা দেখে ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ আপনি এ দু’টি রুকন স্পর্শ করছেন কেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো এ দু’টিতে স্পর্শ করেননি? মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ বাইতুল্লাহর কোন কিছু পরিত্যক্ত নয়। তখন ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নিম্মোক্ত আয়াত পাঠ করে শুনালেনঃ

আরবী……

অর্থঃ নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহর মধ্যে তোমাদের জন্যে রয়েছে উত্তম নমুনা।

তখন মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ আপনি সত্য কথাই বলেছেন।

তাওয়াফে রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে এ দোয়া পাঠ করবেনঃ

দোয়া

 

অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করুণ আর আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুণ।

যতবারই হাজরে আসওয়াদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবেন পূর্বের ন্যায় দোয়া পাঠ করবেন ও রাকবীর বলবেন।

তাওয়াফের বাকি অংশে নিজের পছন্দ অনুযায়ী যে কোন দোয়া, যিকির ও তেলাওয়াত করতে পারেন।

আসলে, বাইতুল্লাহর তাওয়াফ, সাফা মারওয়াহতে সায়ী ও জামারাতে কংকর নিক্ষেপ, এসব ইবাদাতের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর যিকির প্রতিষ্ঠা করা।

এ তাওয়াফে (মক্কায় প্রথম পৌঁছার পর পর যে তাওয়াফ করা হয়) পুরুষের জন্য সুন্নাত হচ্ছে গোটা তাওয়াফে ইযতিবা’ করা এবং তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা, বাকী চক্করে নয়।

ইযতিবা’ হচ্ছেঃ তাওয়াফে ডান কাঁধ খোলা রাখা। অর্থাৎ, ডান কাঁধ খোলা রেখে গাঁয়ের চাদরের মাঝের অংশটা ডান বগলের নিচে রাখা আর তার দুই পার্শ্বকে বাম কাঁধের উপর রাখা।

আর রমল হচ্ছেঃ তাওয়াফের সময় দ্রুত পা ফেলে হাঁটা (দাঁড়ানো) ।

তাওয়াফ হচ্ছে সাত চক্কর। হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদে আসলে এক চক্কর শেষ হবে। হাতিমের দেয়ালের ভিতর দিয়ে চক্কর দিলে তাওয়াফ হবে না।

তাওয়াফের সাত চক্কর পূর্ণ করে মাকামে ইবরাহীমে গমন করবেন এবং এ দোয়া পাঠ করবেনঃ

দোয়া

 

অর্থঃ আর তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর।

এরপর সম্ভব হলে এর পিছনে কাছাকাছি দু’রাকাত নামায আদায় করবেন, অথবা দূরে সরে গিয়ে আদায় করবেন, প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর (কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন) সূরা এবং দ্বিতীয় রাকাতে ফাতিহার পর (কুল হুয়াল্লাহু আহাদ) সূরা পাঠ করবেন।

অতঃপর হাজরে আসওয়াদের নিকট ফিরে আসবেন এবং সম্ভব হলে চুমো দিবেন। অন্যথায় সেদিকে হাতে ইশারা করবেন।

সা’য়ীঃ তাওয়াফ শেষে বেরিয়ে সা’য়ী করার স্থানে যাবেন, যখন সাফা (পাহাড়ের) নিকটবর্তী হবেন তখন পাঠ করবেনঃ

doa

অর্থঃ নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়াহ আল্লাহ তা’আলার নিদর্শগুলোর অন্যতম। এ আয়াতটি এখানে ছাড়া অন্য কোথাও পাঠ করবেন না।

অতঃপর সাফা পাহাড়ে আরোহণ করবেন যাতে করে কা’বা শরীফ দেখা যায়, ওখানে দাঁড়িয়ে কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে হাত উঠিয়ে তখন আল্লাহর প্রশংসা করবেন এবং যা ইচ্ছা হয় দোয়া করবেন।  এ স্থানে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া ছিলঃ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদ ওয়া হুয়া আ’লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনজায়া ওয়া’দাহু ওয়া নাসারা আ’বদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ।

অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক তার কোন শরীক নেই, তারই বাদশাহী এবং সমস্ত প্রশংসা তারই, আর তিনি সকল বিষয়ের উপর সর্বময় ক্ষমতাশীল, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি তার ওয়াদা বাস্তবায়ন  করেছেন, তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সেনাদল সমূহকে পরাজিত করেছেন।

এই দোয়া তিনবার পাঠ করবেন এবং এর মধ্যখানে অন্যান্য দোয়া পাঠ করতে থাকবেন।

এরপর সাফা থেকে নেমে মারওয়াহ পাহাড়ের দিকে পায়ে হেটে যেতে থাকবেন, যখন সবুজ লাইট পর্যন্ত পৌঁছেবেন তখন যত দ্রুত সম্ভব-কাউকে কষ্ট না দিয়ে-দৌড়ায়ে দ্বিতীয় সবুজ লাইট পর্যন্ত যাবেন, এরপর স্বাভাবিক গতিতে হেটে মারওয়াহতে যাবেন এবং মারও্যাহ পাহারে আরোহণ করবেন যাতে করে কা’বা শরীফ দেখা যায়, এখানে দাঁড়িয়ে কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে হাত উঠিয়ে সাফায় যে দোয়া করেছেন তা করবেন।

অতঃপর মারওয়াহ থেকে নেমে হাঁটার নির্ধারিত স্থানটুকুতে হেটে এবং দৌড়ানোর স্থানটুকুতে দৌড়ায়ে সাফার দিকে যাবেন। সাফাতে আরোহণ করবেন যাতে করে কা’বা শরীফ দেখা যায়, ওখানে কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে হাত উঠিয়ে প্রথমবার যে দোয়া করেছেন সে দোয়াই করবেন। আর বাকী সা;য়ীতে ইচ্ছানুযায়ী দোয়া যিকির ও তেলাওয়াত করতে পারেন।

সাফা-মারওয়াহতে আরোহণ করা এবং সবুজ লাইট দু’টির মাঝে দৌড়ানো এগুলো হচ্ছে সুন্নত, ওয়াজিব নয়।

মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করাঃ  সাতবার সা’য়ী পূর্ণ করার পর (অর্থাৎ সাফা থেকে মারওয়াতে একবার, আবার মারওয়াহ থেকে সাফাতে একবার এভাবে) পুরুষ হলে মাথা মুন্ডন করবেন বা চুল খাটো করবেন। তবে মাথা মুণ্ডন অধিক উত্তম। কিন্তু তামাত্তু হজ্ব আদায়কারী হলে ভিন্ন কথা, কারণ হজ্জ নিকটবর্তী, এর পূর্বে চুল গজাবে না। সুতরাং এমতাবস্থায় চুল খাটো করাই উত্তম। যাতে চুল বাকী থাকে এবং হজ্জের সময় মাথা মুন্ডন করতে পারেন। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার সাহাবীগণের মধ্যে যারা যিলহাজ্জ মাসের চতুর্থ দিন সকালে পোঁছেছিলেন, তাঁদেরকে চুল খাটো করে হালাল হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তবে মহিলা চুল মুন্ডন করবেন না।

সর্ব অবস্থাতেই চুল খাটো করবেন, সবগুলো চুল একত্রিত করে আঙ্গুলের অগ্রভাগ পরিমাণ কেটে খাটো করবেন।

পুরুষেরা পুরো মাথা মুন্ডন করা ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ

অর্থঃ তোমাদের মাথা মুণ্ডনরত অবস্থায়।

আর যেহেতু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পুরো মাথা মুন্ডন করেছেন এবং বলেছেনঃ তোমরা আমার নিকট থেকে তোমাদের হজ্জের বিধান সমূহ গ্রহণ করো।

আর তেমনি মাথার চুল খাটো করার বেলায়ও পুরো মাথার চুল খাটো করতে হবে।

এভাবে ওমরায় করণীয় কাজসমূহ সম্পন্ন করে ওমরা আদায় করবেন। সেই সাথে ইহরাম থেকে সম্পূর্ণভাবে হালাল হয়ে যাবেন এবং ইহরাম অবস্থায় তার উপর নিষিদ্ধ কাজসমূহ হালাল হয়ে যাবে।

ওমরায় করণীয় কাজ সমূহের সার সংক্ষেপে

০১. অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্যে গোসল করার ন্যায় গোসল করা ও সুগন্ধী ব্যবহার করা।

০২. ইহরামের পোশাক পরিধান করা, পুরুষের জন্যে পরনের ও গাঁয়ের চাদর, আর মহিলাদের জন্যে শরিয়াহ অনুমোদিত যে কোন পোশাক।

০৩. শুরু থেকে তাওয়াফ পর্যন্ত তালবিয়াহ পাঠ চালু রাখা।

০৪. হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত সাতবার কা’বা  শরীফ তাওয়াফ করা।

০৫. মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু রাকাত নামায আদায় করা।

০৬. সাফা থেকে শুরু করে মারওয়াহতে শেষ করার মাধ্যমে সাফা ও মারওয়াহ সাতবার সা’য়ী করা।

০৭. পুরুষদের জন্যে মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করা, আর মহিলাদের জন্যে চুল খাটো করা।

প্রকাশকঃ গবেষণা ও প্রকাশনা বিষয়ক উপ-মন্ত্রণালয় দাওয়াহ, ইরশাদ, ওয়াকফ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সৌদি আরব।

The post ওমরায় করণীয় কাজ সমূহ appeared first on Amar Bangla Post.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 93

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>