আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক দেশের সাথে আরেক দেশের সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। এই সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে এক দেশের সাথে আরেক দেশের বোঝাপড়া ঠিক থাকে। ফলে বিশ্বে স্থিতিশীলতা বিরাজ করে। এমনিভাবে এক দেশের পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও আনুষঙ্গিক অবস্থা অন্য দেশে তুলে ধরার রীতিও চলে আসছে সেই আবহমান কাল হতেই। এরই ধারাবাহিকতায় জন্ম হয়েছে দূতিয়ালি ব্যবস্থা। এক দেশের রাষ্ট্রদূত অন্য দেশে বাস করে। নিজ দেশের স্বীকৃতি, কৃতিত্ব, সুনাম সেই দেশে তুলে ধরে বিশ্ব মানচিত্রে নিজ দেশের ভাবমর্যাদা তুলে ধরার চেষ্টা করে।
এখনকার মতো স্থায়ীভাবে দূত নিয়োগের মতো রেওয়াজ পৃথিবীর উষালগ্নে চালু না থাকলেও দূত ব্যবস্থা চালু ছিল। দূতের মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বার্তা প্রদান করা হতো। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তৎকালীন বিশ্বের প্রতাপশালী রাষ্ট্রগুলোতে দূত প্রেরণ করেছিলেন। এসব দূত ছিলেন চরিত্র, আদর্শ ও সভ্যতার জ্বলন্ত অগ্নিশিখা। তাদের চারিত্রিক উৎকর্ষ, সাহস, বীরত্ব ও দেশপ্রেম দেখে বহু রাষ্ট্র প্রভাবিত হয়েছে। ইসলাম গ্রহণ করেছেন হাজার হাজার মানুষ আর স্বার্থক ও সফল হয়েছে দূত প্রেরণের মহান উদ্দেশ্য। দূতদের আনীত বার্তা যে সুন্দর, শান্তিময় তা দর্শক ও আহুতরা দূতদের দেখেই বুঝতে পেরেছে।
একটি দেশের সভ্যতার গভীরতা কতটুকু তা নির্ণীত হয় এ দূতদের চেহারা-সুরতেই। তাই তাদের চারিত্রিক উৎকর্ষে দেশের যেমন সুনাম তেমনি নোংরামী ও লাম্পট্যে দেশের রসাতল অবস্থা। চারিত্রিক অধপতন, নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা আর কামনার লেলিহান শিখায় আমাদের দেশের ভাবমূর্তি অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। এটি এখন আর গোপন কোনো বিষয় নয়। ইজ্জতের যতটুকু বাকি আছে, তা খোয়ানোর কাজ করছেন আমাদের দেশের মান্যবার, মহামান্য হর্তাকর্তাগণ। তারা বিশ্ববাসীর সামনে আমাদের মুসলিম দেশটির গর্ব মিশিয়ে দেয়ার জন্য আদাজল খেয়ে উঠে পড়ে লেগেছেন। এমনি এক বার্তা, জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত একে এম জাহিদুর রহমানের (ছদ্মনাম) কীর্তি #গল্প শুনুন :
এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিশালী ও শিল্পসমৃদ্ধ দেশ #জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বের একমাত্র আণবিক বোমার আঘাতে জর্জরিত হওয়ার অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ দেশ। কিন্তু বোমার সেই দগদগে ক্ষত দেহে রেখেই তারা জাতীয় ঐক্য অটুট রেখে এগিয়ে চলেছে দেশ উন্নয়নের কাজে। এতে তারা সফলও হয়েছে। বিশ্বমানচিত্রে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। তো একজন দূত এদেশে নিযুক্ত হলে নিজ দেশের সুনাম রক্ষা করবেন এবং সেই দেশের ভালো গুণগুলো নিজ দেশে আমদানি করবেন। এটাই তার কাছে দেশবাসীর চাওয়া। কিন্তু তিনি তা না করে কী করলেন? এক কথায় আমাদের জাত মেরে দিলেন তিনি!
২০১০ইং ১৩ আগস্ট জাপানে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজে যোগ দেন জাহিদুর রহমান। নিয়মানুযায়ী রাষ্ট্রদূতগণ সপরিবারে কর্মক্ষেত্রে থাকার সুবিধা পান। কিন্তু একদম বৈরাগ্যের মতো সুযোগ হাত ছাড়া করলেন জাহিদুর রহমান। তার এই বৈরাগ্য খ্রিস্টান পাদ্রীদের মতো, যারা সারা জীবন বিয়ে না করে যাজকগিরি করে আর গির্জায় বসে বসে শিশুদের অকালে সতীচ্ছেদ করে। বিশ্বে শিশু ধর্ষণের জন্য যদি কাউকে নোবেল পুরস্কার দেয়ার রীতি গড়ে ওঠে তবে নির্বাচকদেরকে অন্তত এক্ষেত্রে কোনো কষ্ট করতে হবে না। নির্দ্বিধায় তারা খ্রিষ্টান যাজকদেরকে নির্বাচিত করতে পারবেন! পাদ্রী থাকতে কেউ এই পুরস্কার নেয়ার সাহস করতে পারে! যাদের বিবাহ করার অনুমতি নেই, তারা তো অবৈধ পথেই জৈবিক চাহিদা মিটিয়ে নেবে!
থাকগে সে কথা। জাহিদুর রহমান সাহেবের কথায় আসি। তিনি জানালেন তার স্ত্রী মানসিক রোগী। তাই তাকে সাথে নিলে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে। কিন্তু এটা তার দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার বিষয় ছিল না। ছিল কুপ্রবৃত্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার বিষয়। ব্যাপারটি প্রকাশ পেতে সময় নেয় নি।
২০১১ইং সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি নিজের স্যোশাল সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দেন স্থানীয় জাপানী তরুণী কিয়োকো তাকাহাসিকে। চাকরিপ্রার্থী তাকাহাসি ১০ই ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রদূত একে এম জাহিদুর রহমানের সামনে প্রথম ইন্টারভিউ দেন। প্রথম ইন্টারভিউতেই তিনি আমাদের মুসলিম জাতি সত্তাটাকে চরম ঠেঙ্গানী খাওয়ান। তিনি তাকাহাসির কাছে জানতে চান, তুমি কি কাজ শেষে আমার সাথে চা খেতে পারবে? পরবর্তী প্রশ্ন ছিল আমি কি তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে পারি?!
এ প্রসঙ্গে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তাকাহাসি বলেন- ইন্টারভিউয়ের অভিজ্ঞতা না থাকায় ভেবেছিলাম এধরনের অনুরোধ হয়ত বাংলাদেশের সংস্কৃতিরই একটা অংশ। তিনি জানান, চাকরির দ্বিতীয় ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি এবং সেদিনের প্রশ্ন ছিল- তুমি কি অবিবাহিতা? তোমার কি কোনো প্রেমিক আছে?
এরপর ২১ই ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ইন্টারভিউয়ের জন্য তাকে ডাকেন রাষ্ট্রদূত। সেদিন আগের প্রশ্নগুলো পুনরুল্লেখ করেন তিনি। তাকাহাসির ভাষায়, ইন্টারভিউতে এধরনের অভিজ্ঞতা না থাকায় ভেবেছিলাম, এধরনের অনুরোধ হয়ত বাংলাদেশের সাস্কৃতিরই অংশ। তিনি আরও জানান, ইন্টারভিউতে রাষ্ট্রদূত দৈহিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন। তাকাহাসির ভাষ্যানুযায়ী চাকরিতে যোগ দেয়ার প্রথম দিনেই ২৫ই ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রদূতের কক্ষে প্রবেশ করা মাত্রই তিনি তাকে জড়িয়ে ধরে স্বাগত জানান।
তিনি অন্য যে কোনো বিদেশীর চেয়ে আমাকে বেশি জোরে চেপে ধরেছিলেন। সেদিনই অফিসে তার সঙ্গে চা পান করতে হয় আমাকে। পরদিন ২৬ই ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রদূত আমাকে নিয়ে তামাগাওয়া নদী ভ্রমণে গিয়ে একটি নির্জন গাছের নিচে বসেন। বলেন, আমি কি তোমাকে চুমু খেতে পারি। আমি না বলেছিলাম। কারণ, আমাদের দেশে বস পর্যায়ের কারও সাথে এধরনের সম্পর্ক বৈধ নয়। কিন্তু তিনি আমাকে এ কাজে বাধ্য করেছিলেন। ২৮ই ফেব্রুয়ারি অফিসে ঢুকেই তিনি কক্ষের দরজা বন্ধ করে আমাকে আলিঙ্গন করেন এবং চুমু খান। অফিস চলাকালীন বহুবার রাষ্ট্রদূতের এমন আচরণে আমি শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে উঠি।
তাকাহাসি তার অভিযোগনামায় আরও উল্লেখ করেন, মার্চ মাসে আমাকে তার সাথে ডেট করার জন্য কাসাইরিনকারি পার্কে নিয়ে যান। পার্কে হাঁটতে হাঁটতে তিনি আমাকে বলেন, গত আড়াই বছরে কারো সাথে তার শারীরিক সম্পর্ক হয় নি। পরোক্ষভাবে তিনি আমার কাছে শারীরিক সম্পর্কের অনুমতি চান। আমি নেতিবাচক উত্তর দিলে তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে জানান, স্যোশাল সেক্রেটারি হিসেবে তাকাহাসির চাকরির শর্তই হলো শারীরিক সম্পর্ক। এটা না করলে চাকরি থাকবে না। তাকাহাসি উল্লেখ করেন, সেদিন পার্কে হাঁটাহাঁটি ও চুম্বনরত অবস্থায় এক বাংলাদেশী আমাদের ছবি তোলে। তাতে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এরা ঢাকার মিডিয়ায় বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করতে পারে।
তখই আমি বুঝতে পারি রাষ্ট্রদূত আমার সাথে যা করছেন তা বাংলাদেশের কোনো সাংস্কৃতিক বিষয় নয়। তবে ছবি তোলা দেখেও তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয় নি। তিনি আমার সাথে শারীরিক সম্পর্কে স্থাপনের জোর চেষ্টা চালান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে তিনি আমাকে প্রস্তাব দেন আমি যেন একজন জাপানী তরুণী খুঁজে দেই তাকে। আমি তাকে জানাই, আমার এধরনের কোনো বান্ধবী নেই। এরপর থেকে আমি সব সময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকি। কেননা তিনি তার পদের বলে যে কোনো অভিযোগ এড়িয়ে যেতে পারবেন।
তাকাহাসি বলেন, রাষ্ট্রদূতের সব প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার পর তিনি আমার ওপর অসন্তুষ্ট হন এবং জানিয়ে দেন, আমাকে তার স্যোশাল সেক্রেটারির পদে রাখা সম্ভব নয়। পাশাপাশি তিনি তার নিজের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য কোনো প্রমাণও রাখতে চান নি। একারণে তিনি আমার কাছে থাকা সব ডকুমেন্ট জমা দিতে বলেন। কিন্তু আমি তা করি নি। কারণ, আমি নিশ্চিত ডকুমেন্ট নষ্ট করলে তিনি উল্টো আমার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলবেন। তিনি ও দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা আমার ভুল ধরে আমাকে চাকরি থেকে বহিষ্কারের পথ খুঁজছেন। বাংলাদেশী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এব্যাপারে ব্যবস্থা না নিলে আমি জাপানি আদালত ও মিডিয়ায় যাব।
বাংলাদেশী একজন কামুকের এমন নির্লজ্জপনায় কূটনৈতিক মহল ও স্থানীয় জাপানী কমিউনিটিতে আলোড়ন তুললে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম ৮ই মে জাপানে যান এবং তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পান। [তথ্যসূত্র : দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ৬/৬/১১ইং]
অবশ্য জাহিদুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ১৪ই তারিখের আমার দেশ পত্রিকায় জানিয়েছে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
হায় আক্ষেপ! একজন রাষ্ট্রদূত গোটা দেশের প্রতিনিধি। কিন্তু তিনি আমাদের এ কীসের প্রতিনিধিত্ব করলেন? তিনি কি আমাদের রিপুর প্রতিনিধিত্ব করলেন? কত বড় আক্ষেপের কথা, তাকাহাসি ও জাপানীদের অন্তরে তিনি এই বিশ্বাস সৃষ্টি করেছেন যে, পরনারীকে #চুম্বন করা বাংলাদেশের সাংস্কৃতির অংশ! হায়! আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম #মুসলিম রাষ্ট্রের অধিবাসী। মুসলিম বিশ্বে আমাদের এনিয়ে কত গৌরব। কিন্তু রাষ্ট্রদূতের রিপুর তাড়নায় এভাবেই ধ্বসে পড়ল আমাদের গৌরবের দেয়াল? আমরা শেষ পর্যন্ত বহিঃবিশ্বে কামুক জাতি হিসেবে চিহ্নিত হলাম? এই কি ছিল রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব?
অথচ আমাদের গৌরবময় মুসলিম শাসনের ইতিহাসে রাষ্ট্রদূতদের #ইতিহাস ছিল কত গৌরবময়! বিশ্ব বীর রুস্তমের কাছে মুসলিম দূত গমন করলে তিনি তাকে বললেন, আপনারা এখানে এসেছেন কেন? দূত স্বদেশের গৌরবময় ঐতিহ্য ও সভ্যতার প্রতিনিধিত্ব করে বললেন- আমরা মানুষকে মানুষের গোলামী থেকে মুক্তি দিয়ে আল্লাহর গোলামীর সাথে যুক্ত করতে এসেছি! এসেছি কুপ্রবৃত্তি থেকে মানুষকে বের করে আনতে।’
কত বীরত্বময়, গৌরবগাঁথা, স্মরণীয় প্রতিনিধিত্ব! রিপুর তাড়নার কাছে আমরা এভাবেই পরাস্ত হতে থাকব? কামনার আগুন আর মুক্তবাসের দাবানলে পুড়তে থাকবে আমাদের গৌরবের কীর্তিঘরগুলো?
আপনি পড়ছেনঃ মুক্তবাসিনী-২ বই থেকে
The post সম্ভ্রমহানীর কাঠুরিয়া appeared first on Amar Bangla Post.