প্রথম পর্বের পর.….
Download PDF
প্রশ্নঃ বিবাহের পর মোহর কখন ওয়াজেব হয় ?
উত্তরঃ স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করলে, স্পর্শ করলে, নির্জনতা অবলম্বন করলে অথবা বিবাহের পর মারা গেলে মোহর ওয়াজেব হয়। কেবল বিয়ে পড়ালেই মোহর ওয়াজেব হয় না। ৫৫৭ (ইবনে উষাইমীন)
প্রশ্নঃ নাবালিকার বিবাহ কি শুদ্ধ নয়?
উত্তরঃ দেশীয় আইনে সাবালিকা হয় ১৮ বছর পূর্ণ হলে। কিন্তু শরীয়তের আইনে সাবালিকা হল সেই মেয়ে, যার স্বাভাবিকভাবে মাসিক শুরু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তার অনুমতিক্রমে বিবাহ দিলে কোন বাধা নেই। অবশ্য মেয়ে না চাইলে জোরপূর্বক বিবাহ শুদ্ধ নয়।
প্রশ্নঃ অনেক বৃদ্ধ অল্প বয়সের মেয়েকে বিয়ে করে, এটা কি শরীয়তে বৈধ ?
উত্তরঃ মেয়ে ও তার অভিভাবকের সম্মতি থাকলে সে বিবাহ বৈধ।
প্রশ্নঃ নাম করা বংশের ছেলে বা মেয়ের সাথে কি বংশ পরিচয়হীন ছেলে বা মেয়ের বিবাহ শুদ্ধ নয়?
উত্তরঃ কোন কোন মানুষ এই ভেদাভেদ জ্ঞান রেখে উপযুক্ত পাত্র বা পাত্রী হাতছাড়া করে। অথচ তা বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক আল্লাহ ভীরু। আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন।” (১৩)
আর মহানবী (সঃ) বলেন, “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়তম বান্দা হল সেই যার চরিত্র সুন্দর।” (ত্বাবারানী, সহীহুল জামে ১৭৯ নং)
ইবনে আব্বাস (রঃ) বলেন, “আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি সে, যে সবচেয়ে বেশী পরহেযগার। আর সবচেয়ে উচ্চ বংশীয় লোক সে, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।”(আল-আদাবুল মুফরাদ)
নবী (সঃ) বলেন, “যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদেরকে মুগ্ধ করে, তার সাথে (তোমাদের ছেলে কিংবা মেয়ের) বিবাহ দাও। যদি তা না কর (শুধুমাত্র দ্বীন ও চরিত্র দেখে তাদের বিবাহ না দাও বরং দ্বীন বা চরিত্র থাকলেও কেবলমাত্র বংশ, রূপ বা ধন সম্পত্তির লোভে বিবাহ দাও), তবে পৃথিবীতে বড় ফিতনা ও মস্ত ফাসাদ, বিঘ্ন ও অশান্তি সৃষ্টি হবে।” (তিরমিযী ১০৮৫ নং, ইবনে মাজাহ ১৯৬৭ নং)
প্রশ্নঃ মেয়ে যাকে বিয়ে করতে রাজী নয়, তার সাথে বাপ জোরপূর্বক বিয়ে দিতে পারে কি?
উত্তরঃ মেয়ে রাজী না থাকলে কারো সাথে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া শরীয়তসম্মত নয়। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেছেন, “অকুমারীর পরামর্শ বা জবানী অনুমতি না নিয়ে এবং কুমারীর সম্মতি না নিয়ে তাদের বিবাহ দেওয়া যাবে না। আর কুমারীর সম্মতি হল মৌন থাকা।” ৫৬১ (বুখারী, মুসলিম, সহীহ নাসাঈ ৩০৫৮, সহীহ ইবনে মাজাহ ১৫১৬ নং)
প্রশ্নঃ বিয়েতে বাপ রাজী ছিল না। ভাই দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে অবশ্য বাপ রাজী হয়ে গেছে। এখন সে বিয়ের মান কি ?
উত্তরঃ বাপ থাকতে ভাই শরয়ী অভিভাবক হতে পারে না। সুতরাং বিবাহ শুদ্ধ নয়। পরবর্তীতে রাজী হলেও পুনরায় বিয়ে পড়াতে হবে। ৫৬২ (মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহীম) অনুরূপ যারা পালিয়ে গিয়ে মেয়ের অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই বিয়ে করে তাদের অবস্থা।
প্রশ্নঃ অবৈধ প্রনয়ের মাধ্যমে কোট ম্যারেজ বা লাভ ম্যারেজ বৈধ কি? তাতে যদি মেয়ের অভিভাবক সম্মত না থাকে, তাহলে সে বিবাহ বৈধ কি?
উত্তরঃ বিয়ের পূর্বে কোন যুবক যুবতীর ভালবাসা করা হারাম। অতঃপর আপোষে মেলামেশা ও ব্যাভিচার করা তো কবীরা গোনাহর পর্যায়ভুক্ত। আর ব্যাভিচার হল ১০০ চাবুক ও কারা শাস্তি ভোগের পাপ। পরন্ত বিবাহিত হলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার উপযুক্ত। অতঃপর যে মা বাপ কতো মায়া মমতার সাথে মানুষ করে, সেই মা বাপের মাথায় লাথি মেরে চোরের মতো পালিয়ে গিয়ে লাভ ম্যারেজ বা কোর্ট ম্যারেজ করে! কিন্তু সে বিয়েতে মেয়ের বাপ রাজী না থাকলে বিয়ে শুদ্ধ হবে না। যেহেতু নবী (সঃ) বলেছেন, “যে নারী তার অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই নিজে নিজে বিবাহ করে, তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল।” ৫৬৩ (আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারেমী, মিশকাত ৩১৩১ নং)
এমন চোরদের দাম্পত্য, চির ব্যভিচার হয়। যেহেতু তাদের বিবাহ শুদ্ধ নয়।
প্রশ্নঃ মা বাপের পছন্দমতো বিয়ে করা কি ছেলের জন্য জরুরী? মা বাপ যখন নিজেদের কোন আত্মীয় বন্ধুর মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চায়, অথবা বেশি পণদাতা ঘরের মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চায়, অথচ ছেলের পছন্দ না হয়, তাহলে কি তাদের বাধ্য হয়ে সেই বিয়ে করা জরুরী? দ্বীনদার মেয়ে যদি বাপ মা পছন্দ না করে, তাহলে ছেলে কী করতে পারে?
উত্তরঃ ছেলের মেয়ের পছন্দ নয়, তার সাথে জোর করে বিয়ে দেওয়া বাপের জন্য জায়েয নয়। বরং বরের সম্মতি না থাকলে জোর করে বিয়ের বন্ধনই হবে না। সুতরাং ছেলে সে ক্ষেত্রে বাপের কথা মানতে বাধ্য নয়। বাপ মা নিজেদের স্বার্থ দেখলে বউ পছন্দে দ্বীনদারিকে প্রাধান্য না দিলে ছেলে নিজেই সে বিয়ে করতে পারে, (ইবনে উষাইমীন) কিন্তু যে মেয়ে মা বাপের পছন্দ নয়, সে মেয়েকে নিজে নিজে বিয়ে করে ঘরে আনলে যদি তারা ঘরে জায়গা না দেয়, তাহলে অবশ্যই তা বড় অন্যায়। অবশ্য মেয়ে খারাপ বা অসতী হওয়ার ফলে যদি মা বাপ বাদ সাধে, তাহলে সে কথা ভিন্ন।
প্রশ্নঃ অনেক ছেলে আছে, যার বিয়ের আগে হবু বউকে দেখতে লজ্জা করে এবং বলে, ‘মা-বোন দেখলেই যথেষ্ট। তাদের পছন্দ হলে আমারও পছন্দ হয়ে যাবে।’ এটা কি ঠিক?
উত্তরঃ এ হল সেই ছেলেদের কথা, যার নিজের মা বোনকে চরম শ্রদ্ধা ও ভক্তি করে। কিন্তু তার ফলে নিজের জীবনের একটি মহাফয়সালার সময়ে তাদের অন্ধভক্তি সাজা ঠিক নয়। বরং অন্ধভক্ত সাজাতে হলে তাদের থেকেও বেশি প্রিয় মহানবী (সঃ) এর সাজাতে হয়। তিনি বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ কোন মহিলাকে বিবাহ প্রস্তাব দেয়, তখন যদি প্রস্তাবের জন্যই তাকে দেখে, তবে তা দূষণীয় নয়; যদিও ঐ মহিলা তা জানতে না পারে।” ৫৬৬ (সিলসিলাহ সহীহাহ ৯৭ নং)
এক মহিলার সাথে মুগীরাহ বিন শু’বাহর বিয়ের কথা পাকা হল। তিনি তাকে বললেন, ‘তাকে দেখে নাও। কারণ তাতে বেশি আশা করা যায় যে, তোমাদের ভালবাসা চিরস্থায়ী হবে।’ ৫৬৭ (আহমাদ ৪/২৪৪,২৪৬, তিরমিযী ১০৮৭ নং, নাসাঈ ৬/৬৯, ইবনে মাজাহ ৮৬৬ নং) সুতরাং এই নির্দেশের উপরে মা বোনের দেখার প্রাধান্য দেওয়া জ্ঞানী যুবকের উচিৎ নয়। যাতে তাকে পরে পস্তাতে না হয় এবং মা বোনের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে তাদের প্রতি অভক্তি না চলে আসে। যেহেতু বিয়ের আগে দেখে অপছন্দ হলে তাকে বর্জন করার সুযোগ থাকবে, কিন্তু বিয়ের পরে সে সুযোগ বিরল।
প্রশ্নঃ যাকে বিবাহ করব, তাকে তার অজান্তে লুকিয়ে দেখতে পারি কি?
উত্তরঃ বিয়ের আগে কনেকে দেখে নেওয়া বিধেয়। যাকে পছন্দ অপছন্দ করার মতো সুযোগ হাতছাড়া না হয়ে যায়। সুতরাং যদি কেউ বিবাহ করার পাক্কা নিয়তে নিজ পাত্রীকে তার ও তার অভিভাবকের অজান্তে গোপনে থেকে লুকিয়ে দেখে, তাহলে তাও বৈধ। তবে এমন স্থান থেকে লুকিয়ে দেখা বৈধ নয়, যেখানে সে তার একান্ত গোপনীয় অঙ্গ প্রকাশ করতে পারে। অতএব স্কুলের পথে বা কোন আত্নীয়ের বাড়িতে থেকেও দেখা যায়। প্রিয় নবী (সঃ) বলেন, “যখন তোমাদের কেউ কোন রমণীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তখন যদি প্রস্তাব এর জন্যই তাকে দেখে, তবে তা দূষণীয় নয়; যদিও রমণী তা জানতে না পারে।” ৫৬৮ (সিঃ সহীহাহ ৯৭ নং)
সাহেবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি এক তরুণীকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তাকে দেখার জন্য লুকিয়ে থাকতাম। শেষ পর্যন্ত আমি তার সেই সৌন্দর্য দেখলাম, যা আমাকে বিবাহ করতে উৎসাহিত করল। অতঃপর আমি তাকে বিবাহ করলাম।’ ৫৬৯ (সিঃ সহীহাহ ৯৯ নং)
প্রশ্নঃ ইনগেইজমেন্ট বা বাগদানের সময় বরকনের আংটি পরা কি ঠিক?
উত্তরঃ এটি একটি ইউরোপীয় ও বিজাতীয় প্রথা। মুসলিমদের বৈধ নয়, বিজাতির অনুসরণ করা।
প্রশ্নঃ আমাদের বিবাহ ঠিক হয়েছে। আগামী বছর বিবাহ হবে। ততদিন পর্যন্ত আমি কি হবু স্ত্রীকে টেলিফোনের মাধ্যমে দ্বীন শিক্ষা দিতে পারি? কোন সাংসারিক আলাপ আলোচনা করতে পারি কি?
উত্তরঃ পাত্রী দেখার পর বিবাহ ঠিক হয়ে গেল অথবা পাকা কথা বা তার দিন স্থির হয়ে গেলে হবু স্ত্রীর সাথে পর্দার সাথে বা টেলিফোনের অথবা পত্রালাপের মাধ্যমে দ্বীনী বা সাংসারিক কোন আলোচনা করা হারাম নয়। তবে তা হারামের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। তবুও যদি সত্যই আপনি হারামের দিকে না যান, অর্থাৎ কোন যৌন বিষয় বা প্রেম ভালবাসার কথা আলোচনা না করেন— আর তা অবশ্যই কঠিন— তাহলে আপনি তা করতে পারেন। নচেৎ ক্ষেতের পাশে চরতে চরতে যদি ক্ষেতের ফসলও খেতে শুরু করেন, তাহলে অবশ্যই আপনি গোনাহগার হবেন।
প্রশ্নঃ কনের মাসিক অবস্থায় কি বিয়ে পড়ানো যায় ?
উত্তরঃ কনের মাসিক অবস্থায় বিয়ে পড়ানোতে কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হল, বাসর রাতে স্বামী সহবাস করা। যেহেতু তাতে রয়েছে মহাপাপ।
প্রশ্নঃ বিয়ের সময় উলুধ্বনি দেওয়া বৈধ কি?
উত্তরঃ বিয়ের সময় উলু-উলু খুশীর ধ্বনি বৈধ নয়। এ সময় বর কনেকে দুআ দিতে হয়। ৫৭০ (ইবনে জিবরীন)
প্রশ্নঃ বিবাহের সময় খাস মহিলা মহলে কেবল মহিলাদের সামনে মহিলারা নাচতে পারে কি?
উত্তরঃ মহিলাদের নাচে অনেক প্রকার ফিতনার আশঙ্কা আছে। তাই তা মাকরূহ। ৫৭১(ইবনে উষাইমীন)
প্রশ্নঃ বিবাহের সময় মেয়েরা ঢোল বাজিয়ে গান করতে পারে কি না?
উত্তরঃ কেবল মহিলাদের সামনে হলে ও কেবল তাদের কানে গেলে ‘দুফা’ (একমুখো ঢোলক) বাজিয়ে বৈধ গান গাওয়া যায়। (সাফা) তার মানে বেগানা পুরুষের সামনে বা তাঁদেরকে শুনিয়ে গাইলে অথবা তার সঙ্গে ঢোল বা অন্য কোন মিউজিক হলে অথবা গান অশালীন বা শিরক বা বিদআতী হলে চলবে না।
প্রশ্নঃ বিবাহে দফ বাজিয়ে গান মেয়েরা গাইতে পারে, কিন্তু কতদিন? কোন দিনে এই গীত বা গান গাওয়া যায়?
উত্তরঃ বিবাহের প্রচার স্বরূপ দফ বাজিয়ে অথবা না বাজিয়ে বৈধ গীত বাসরের রাতে গাওয়া বিধেয়। এ ছাড়া অন্য দিনে গাওয়ার অনুমতি নেই। ৫৭২ (ইবনে উষাইমীন)
প্রশ্নঃ বিবাহের পর মহিলা মহলে বর কনেকে ‘একঠাই’ করা বৈধ কি? উল্লেখ্য যে, সেখানে বরের সাথে তার বুনাই বন্ধুও থাকে। সেখানে বর কনেকে নিয়ে চলে নানা লেকচার, নানা কীর্তি।
উত্তরঃ বাড়ীর ভিতরে বেপর্দা মেয়েদের এমন ‘একঠাই’ আচার বৈধ নয়। শরীয়তে এমন বেহায়ামির সমর্থন নেই। ৫৭৩ (ইবনে বায, ইবনে উষাইমীন, ইবনে জিবরীন)
প্রশ্নঃ স্ত্রী কি নির্জনে কেবল স্বামীকে নানা অঙ্গ ভঙ্গির সাথে নাচ দেখাতে পারে?
উত্তরঃ তাতে কোন বাধা নেই। ৫৭৪ (আলবানী)
প্রশ্নঃ গান বাজনা হারাম। কিন্তু স্বামী স্ত্রী যদি একে অপরকে শোনায়, তাহলে তাতে ক্ষতি আছে কি?
উত্তরঃ স্বামী স্ত্রী একে অপরকে প্রেমের গান গেয়ে শোনাতে পারে। তবে তাতে শর্ত হলঃ যেন তার সাথে বাজনা না থাকে এবং তারা ছাড়া অন্য কেউ তা শুনতে না পায়। এমনকি তাদের সন্তানরাও তা না শোনে। কারণ এটিও এক প্রকার স্পর্শ ও চুম্বনের মতো মিলনের ভূমিকা।
প্রশ্নঃ স্বামীর হাতে স্ত্রীর আংটি বা স্ত্রীর চুড়ি রাখা কি জরুরী? তা খুলে ফেললে কি কোন অমঙ্গল বা বিপদের আশঙ্কা আছে?
উত্তরঃ দাম্পতের চিহ্নস্বরূপ হাতে আংটি দেওয়া বৈধ নয়। কারণ তা অমুসলিমদের আচরণ। ৫৭৫ (ইবনে উষাইমীন) হাতের সৌন্দর্যের জন্য মহিলাদের চুড়ি পরা বৈধ। তবে তাতে এই বিশ্বাস রাখা অমূলক যে, তা খুলে ফেললে স্বামীর কোন অমঙ্গল ঘটবে।
প্রশ্নঃ আমাদের বিবাহের দিনে আমি কি আমার স্ত্রীকে কোন উপহার দিয়ে স্মৃতিচারণা করে খুশী করতে পারি?
উত্তরঃ এ দরজা খুলে দেওয়া ঠিক মনে করি না। কারণ ধীরে ধীরে তা বিজাতির ‘হানিমুন’ ও ‘বিবাহ বার্ষিকী’ পালনের প্রথা হিসেবে পালন শুরু হয়ে যাবে। সুতরাং প্রত্যহ না পারলেও অনির্দিষ্ট দিনে কোন উপহার পেশ করে ঐ খুশী করা যায়। নচেৎ মুসলিম দম্পতির তো সর্বদা খোশ থাকার কথা। ৫৭৬ (ইবনে উষাইমীন) মহানবী (সঃ) বলেন, “সর্বশ্রেষ্ঠ স্ত্রী হল সে, যার দিকে তার স্বামী তাকালে তাকে খোশ করে দেয়, যাকে কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং সে তার নিজের ব্যপারে এবং স্বামীর মালের ব্যপারে কোন অপছন্দনীয় বিরুদ্ধাচরণ করে না।”৫৭৭ (আহমাদ, নাসাঈ)
প্রশ্নঃ স্ত্রী কি কুলক্ষণা হতে পারে?
উত্তরঃ মহানবী (সঃ) বলেছেন, “যদি কোন কিছুতে কুলক্ষণ থাকে, তাহলে তা আছে নারী, বাড়ী ও সাওয়ারী (গাড়ী)তে।” ৫৭৮ (বুখারী)
ভাগ্যদোষে এমন কুলক্ষণা স্ত্রী এসে স্বামীর সুখী জীবনকে দুঃখময় করে তুলতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে তকদীরের উপর বিশ্বাস রেখে আল্লাহ্র উপর পরিপূর্ণ ভরসা রাখতে হয়। আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) বলেন, “কিছুকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা শিরক। কিছুকে কুপয়া মনে করা শিরক, কিছুকে কুলক্ষণ মনে করা শিরক। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার মনে কুধারনা জন্মে না। তবে আল্লাহ (তারই উপর) তাওয়াক্কুল (ভরসার) ফলে তা (আমাদের হৃদয় থেকে) দুর করে দেন।” ৫৭৯ (আহমাদ ১/৩৮৯, ৪৪০, আবূ দাউদ ৩৯১০, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, হাকেম প্রমুখ, সিঃ সহীহাহ ৪৩০ নং)
প্রশ্নঃ আমার স্বামী বড় কৃপণ। আমার ব্যাপারে এবং আমাদের ছেলেমেয়ের ব্যাপারে পয়সা খরচ করতে বড় কৃপণতা করে। এখন তার অজান্তে যদি টাকা পয়সা নিয়ে খরচ করি, তাহলে সেটা কি চুরি হবে?
উত্তরঃ স্বামী যদি সত্য সত্যই কৃপণ হয় এবং বাস্তবেই যদি স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের খরচ করা বৈধ। তবে তা যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত না হয়। অধিক বিলাসিতা করার জন্য না হয়। অথবা অন্য কোন আত্নীয়কে দেওয়ার জন্য না হয়। একদা আবূ সুফয়ানের স্ত্রী হিন্দ নবী (সঃ) কে বললেন যে, ‘আবূ সুফইয়ান একজন কৃপণ লোক। আমি তার সম্পদ থেকে (তার অজান্তে) যা কিছু নিই, তা ছাড়া সে আমার ও আমার সন্তানকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খরচ দেয় না।’ রাসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, “তোমআর ও তোমার সন্তানের প্রয়োজন মোতাবেক খরচ (তার অজান্তে) নিতে পার।” ৫৮০ (বুখারী ও মুসলিম)
প্রশ্নঃ আমার স্বামী আমাকে ভালবাসে না। কথায় কথায় আমাকে গালাগালি করে, মারধরও করে। ছেলেমেয়ে এবং নিকট ও দুরের মানুষের কাছে আমাকে অপমানিতা করে। কিন্তু সে আবার নামাযও পড়ে। সুখ শান্তির জন্য আমি এখন কি করতে পারি?
উত্তরঃ (১) আপনি ধৈর্য ধরুন এবং গালি ও মারের বদলা নেওয়া থেকে দূরে থাকুন।
(২) আল্লাহ্র কাছে নামায দুআ করুন, যেন আল্লাহ আপনার স্বামীকে সৎশীল বানায়।
(৩) কেন আপনাকে গালাগালি বা মারধর করছে, তার কারণ আবিষ্কার করুন। আপনি বলছেন, ‘সে নামাযী’। তাহলে আশা করি, সে পাগল নয় এবং মাদকদ্রব্যও সেবন করে না। তাহলে কেন খামোকা আপনাকে গালাগালি করবে? ভেবে দেখুন, দোষ আপনার মধ্যে নেই তো? আপনার পারিপাট্য, সাজগোজ বা সময়ানুবর্তিতাতে কোন ত্রুটি নেই তো? আপনি কি আপনার স্বামীর সব চাহিদা মিটাতে পেরেছেন? আপনি কি সেই স্ত্রী, যার ব্যাপারে মহানবী (সঃ) বলেছেন, “ সর্বশ্রেষ্ঠ স্ত্রী হল সে, যার দিকে তার স্বামী তাকালে তাকে খোশ করে দেয়, যাকে কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং সে তার নিজের ব্যাপারে এবং স্বামীর মালের ব্যাপারে কোন অপছন্দনীয় বিরুদ্ধাচারণ করে না।” ৫৮১ (আহমাদ, নাসাঈ)
আপনি হয়তো কোন কোন ব্যাপারে তার মতের সাথে মত মিলাতে পারছেন না। আপনি হয়তো চাচ্ছেন, সে আপনার মতে চলুক। অথচ বৈধ বিষয়ে তার অনুগত্য করা আপনার জন্য ওয়াজেব। সে আপনার কর্তা, অথচ আপনি হয়ত তাকে নিজের কর্তা বলে মেনে নিতে পারছেন না। আর তার জন্যই সে আপনার প্রতি খাপ্পা। আপনি হয়ত তার মুখের ওপর মুখ দেন, পার প্রতি মুখ চালান। আর তার জন্যই সে আপনাকে মারধর করে। যাই হোক, কারণ নির্ণয় করে জ্ঞানী মেয়ের মতো তার বাধ্য হয়ে যান। আর এতে নিজেকে ছোট মনে করবেন না। কারণ, স্বামীর মর্যাদার কাছে প্রত্যেক স্ত্রীই ছোট; যদিও স্ত্রী ধনে, বংশে ও শিক্ষায় স্বামীর তুলনায় বড় হয়। এ কথা মেনে নিতে পারলে সুখ শান্তির বাগানে আবার বসন্ত ফিরে আসবে।-আরো পড়ুন
The post বিবাহ ও দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর। পর্ব ২ appeared first on Amar Bangla Post.